দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কায় দুই চোখেই ‘ছররা গুলি লাগা’ শহীদুল

সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে গত ২৯ জুলাই পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম | ছবি: সংগৃহীত


নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত বিএনপির নেতা শহীদুল ইসলাম ওরফে টিটুর (৪৮) দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজধানীর একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর তিনি ডান চোখে ঝাপসা দেখতে পেলেও বাঁ চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। যদিও ডান চোখের ভেতর থেকে একটি ছররা গুলি চিকিৎসকেরা বের করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এমন অবস্থায় তিনি দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন।

গত ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচি পালনের চেষ্টাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১০ নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে অর্ধশতাধিক রাবারের বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিবিদ্ধ হন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁর দুই চোখ, বুকে, ঘাড়ে এই গুলি লাগে।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে গত ২৯ জুলাই বিএনপির নেতা–কর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় | ছবি: দিনার মাহমুদ


যদিও জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাই লাউ মারমা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ অনেক দূর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়েছে। কাউকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছোড়েনি। শহীদুল কীভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন, তা তাঁদের জানা নেই।

শহীদুলের দুই চোখে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় পুলিশকে দায়ী করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে শহীদুলের এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। অপর একটি চোখ নষ্ট হওয়ার পথে। এই ঘটনায় আমরা আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’

ঘটনার পর শহীদুল ও তাঁর পরিবার ধানমন্ডিতে একটি ভাড়া বাড়িতে আত্মগোপনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এই প্রতিবেদকের কাছে দুই চোখের দৃষ্টি শক্তি হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শহীদুল ও তাঁর স্ত্রী গৃহিনী আফরোজা ইসলাম।

ওই দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে শহীদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ২৯ জুলাই শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনে তিনিসহ ৪০ থেকে ৫০ জন নেতা-কর্মী শিমরাইলে জড়ো হন। সেখানে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ দেখে মহাসড়কের পাশে অবস্থান নেন। এ সময় ডিবি পুলিশ এসে লাঠিপেটা শুরু করলে ভয়ে কয়েকজন নেতা-কর্মী দৌড়ে চলে যান। তিনিসহ কয়েকজন সেখানে রয়ে যান।

শহীদুল ইসলাম বলেন, কিছুক্ষণ পর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেনসহ অন্যরা মহাসড়কে ওঠার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পুলিশ ধাওয়া দিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হলে পুলিশ ৮ থেকে ১০টি রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। রাবারের ছররা বুলেট তাঁর দুই চোখ, কানের পাশে চোয়াল, বুকসহ ১০টি স্থানে লাগে। দুই চোখ দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হতে শুরু করলে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ভেতরের সড়ক দিয়ে চিকিৎসার উদ্দেশে রামপুরা হয়ে ধানমন্ডি হাসপাতালে যান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *